জিয়াউদ্দীন চৌধুরী (জেড সেলিম), বিশেষ প্রতিনিধি, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে ফ্যাশনের ধরন। আর এই ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে সবাই। আর সেই তালে তাল মেলাতে এখন তরুণ তরুণীরা অনেক ফ্যাশন সচেতন। সব সময় চোখ রাখছে কখন কোন ফ্যাশনটা বাজারে চলছে। আর সেই ফ্যাশনে নিজেকে কতটা মানাবে কতটা সুন্দর দেখাবে এই নিয়ে চলছে তাদের ভাবনা। ফ্যাশনের সাথে সাথে আমাদের দেখতে হবে পোশাকটি কতটুকু মার্জিত। প্রথমেই তরুণীদের ফ্যাশন নিয়ে বলা যাক। লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, নতুন ধরনের স্কার্টের ফ্যাশন। টপস এবং স্কার্টের ডিজাইনের মধ্যে এসেছে ভিন্নতা। লং স্কার্ট এবং শর্ট স্কার্ট দুটোই চলছে। তবে তরুণীদের জন্য লং স্কার্টটাই বেশি মানানসই। এখন লং স্কার্টের টপস এক ধরনের অনেকটা শার্টের মতো চলে এসেছে। টপসে বড় বোতাম-টপস আর মাঝ বরাবর দুই ইঞ্চি চওড়া কাজ চলছে। টপসের কাধ থেকে একটু নীচ থেকে শুরু করে টপসের মাঝ বরাবর বিভিন্ন ধরনের এন্টিক বা মেটালের কাজ করা চলছে বেশ। দুই হাতের দুই দিকে দুই ফিতা বা হাতের মাঝ বরাবর একটু কাটা চলছে। এই টপসের সাথে তরুণীরা পড়ছে বড় মালা। স্কার্টের কাটিং এ এসেছে অনেক পরিবর্তন। স্কার্টের কোমর থেকে একটু চাপা নীচের দিকে থাক থাক করা অনেক ঘেরের স্কার্ট বেশি চলছে। স্কার্টের নীচের দিকে ঝুলে কয়েকটি থাক থাকছে এবং সেগুলো বেশির ভাগ সময় কুচির মাঝ বরাবর ইলাস্টিক দেয়া থাকে। আবার কিছু এক ছাঁটের স্কার্টের নীচে একবিঘা সমান লম্বা লম্বা কুচি দেয়া হয়। স্কার্টের কাটিং এর মধ্যে কোমর থেকে হাঁটু বরাবর একটু চাপা আর হাঁটুর নীচ থেকে পুরোটা বেশি ঘেরের কাজ চলছে। এর সঙ্গে ত্রিকোয়ার্টার প্যান্ট তরুণীদের চলতি ফ্যাশন টপসগুলো হাফ হাইকলার হাতা চলছে। অনেকে সফট কাপড়ের প্যান্ট বানিয়ে পড়ছে। অনেকে মোবাইল প্যান্ট অর্থাৎ অনেকগুলো পকেট ওয়ালা প্যান্ট পড়ছে। কিন্তু ফুল প্যান্ট এ আবার হাঁটু অনেকখানি নীচে আবার ফিতার সাথে বোতাম লাগানো থাকে। তাতে সেটা ফুল প্যান্ট হিসেবেও গণ্য করা যায়। কিছু কিছু ত্রিকোয়ার্টার প্যান্টে হাল্কা নকশা করা থাকে। জিন্সের ব্যাপারেও থাকে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন। যেমন বুট কাট জিন্স। এটি সাধারণত বেলবটম প্যাটার্নের এই জিন্স ট্রাউজারের ওয়েস্ট লাইন ও পুট ফিটেড। কিন্তু পায়ের কাছে তা হাল্কা ঢোলা হয়ে থাকে। মূলত কাউবয় বুটের সঙ্গে পরার জন্য এই জিন্স ট্রাউজারের উত্থান। বেলবেটম জিন্স-এর কথা বলতে হলে বলা যায় রক এ্যান্ড রোল যুগের পরপরই মূলত জিন্স ট্রাউজারের ওপর প্রয়োগ করা হয় বেলবেটম কাট। আঁটোসাটো স্ট্রেইট ওয়েস্ট এবং অপেক্ষাকৃত ঢোলা ফোল্ডের আনুপাতিক মাপ সব সময় বজায় রাখা হয়। ংকারপেন্টার ডিজাইনের জিন্সগুলো অপেক্ষাকৃত লুজ ফিটিং ও হ্যাংগিং পুট ছাড়াও কারপেন্টার জিন্সের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতিরিক্ত চারটি পকেট ও ইউটিলিটি লুপের ব্যবহার হয়ে থাকে। সময়ের প্রয়োজনে কারপেন্টার জিন্স পরিনিত হয় হিপ-হপ জিনসে। কেনা স্কার্ট অনেক সময় আঁটসাঁট কিংবা বেশি ফুরফুরে মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেয়ার পদ্ধতিটাও মন্দ নয়। ঢাকার চাঁদনীচক, মৌচাকে অনেকগুলো টেইলার্স আছে সেখানে অর্ডার করে বানানো যায় স্কার্ট। বানাতে দেয়ার আগে পছন্দসই ডিজাইনের একটা স্কেচ তৈরি করে নিন। এরপর সব উপকরণগুলো কিনে নিন। এক্ষেত্রে চাঁদনীচক, নিউমার্কেট, ধানমন্ডির মোহাম্মদীয়া সুপার মার্কেটসহ ঢাকার ইসলামপুরে মোটামুটি সস্তায় পছন্দের কাপড়টি খুঁজে পাওয়া যাবে। এরপর ডিজাইনের সাথে মিল রেখে জড়ি, বোতাম, লেস এসব কিছুই পাওয়া যায় চাঁদনী চকের উপর তলায়। সময় এবং স্থান বুঝে স্কার্ট ব্যবহার করা উচিত। স্কার্ট কিন্তু গরম দেশের পোশাক। তাই ফুরফুরে পরিবেশে স্কার্ট পরা উচিত। রাতের পার্টির জন্য মিনি, পেনসিল কিংবা লিলেনের ফ্লোয়িং স্কার্ট ব্যবহার হয়ে থাকে। আর দিনে বাইরে বেরনোর সময় ব্যবহার হয়ে থাকে হাল্কা রঙের নন্দীনি স্কার্ট। স্কার্টের সঙ্গে টি-শার্ট, ফতুয়া পরিধান করা হয়। তরুণীরা রঙের সাথে মানিয়ে স্কার্টের সাথে হাইহিল, পেন্সিল হিল জুতোর প্রচলন থাকলেও এখন কিন্তু ফ্ল্যাট স্টাইল জুতা ব্যবহৃত হয়। অনেক তরুণীরা আবার ইংলিশ স্টাইলের স্কার্ট পছন্দ করে থাকে। এগুলো পাওয়া যায় ওয়েস্টেস ও চির চেনা বঙ্গবাজারে। সাইজের দিক থেকে হের ফের হলেও দামের দিক থেকে বঙ্গবাজারই বেস্ট। তবে স্কার্টের সাইজগুলো টেইলার্সের মাধ্যমে এডিট করা হয়। অনেক তরুণী দেশী স্কার্ট কেনার জন্য চলে যান- মান্ত্রা, আড়ং, বাংলার মেলা, নিপুন এসব শোরুমে। স্কার্টের দাম নির্ভর করে কাপড় এবং ডিজাইনের উপর। কেউ চাইলে কম দামী স্কার্ট কিনে বাড়িতে বসেই সেটাকে মেশিনের মাধ্যমে করে তুলতে পারেন আকর্ষণীয়। এধরনের সব উপকরণই এখন ঢাকাতে পাওয়া যায়। তরুণীদের পাশাপাশি তরুণদের মধ্যেও এসেছে ফ্যাশন ভাবনা। চলতি ফ্যাশন ধারায় গা ভাসানো নয় বরং যুগোপযোগী ও যুৎসই পোশাকের মাধ্যমে নিত্য নতুন ট্রেন্ড সৃষ্টিই আজকাল তরুণদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন উৎসবে ছেলের পাঞ্জাবীই প্রথম পছন্দ। তবে কাটিং এর ক্ষেত্রে আর সবার চেয়ে এগিয়ে বড়রা সনাতন ধারাতে চললেও তরুণরা কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা গবেষণাতে ফ্যাশনকে করে তুলছে গতিময়। তাই লম্বার দৌড়াত্বে পাঞ্জাবির লেনথ ছোট। অনেকটা হাঁটু পর্যন্ত। যার নাম শর্ট পাঞ্জাবি। আবার শার্ট কলার কিংবা হাতা গুটিয়ে পাঞ্জাবী পড়ার অভ্যাসও ইদানিং তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে জিন্সের পাঞ্জাবীও তরুণরা ব্যবহার করছে ব্যাপকভাবে। পাশাপাশি ফতুয়ার প্রচলনও কম নয়। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে ফতুয়া হয়ে উঠছে তারুণ্যের দেশজ সংস্করন। ফতুয়ার কাটিং এর ক্ষেত্রেও রঙের মতো বৈচিত্র্য বজায় থাকছে। দেশীয় ফ্যাশনে যেমন ছেলেরা ফতুয়াকে বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের প্রিন্ট আর ভিন্ন ধরনের টি-শার্টও আধিপত্য বিস্তার করেছে তারুণ্যের ফ্যাশনে। আজিজ মার্কেট কিংবা এস্টেচির মতো ব্র্যান্ডগুলো তরুণদের কাছে টি-শার্ট নিয়ে এসেছে নতুন মাত্রায়। নিজের স্টাইলকে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে অনেকে বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টি-শার্ট। বড় বড় প্রিন্ট মোটিভ কিংবা রঙের নানান ব্যবহার টি-শার্টের ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করেছে তুমুলভাবে। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে রঙের বৈচিত্র্যে তরুণরা এখন অনেক বেশি রঙিনই শুধু নয় বরং নিজেদের এগিয়ে রেখেছে পরীক্ষা নিরীক্ষা আর উজ্জ্বল রঙের বিন্যাসে। এক সময় খুব বর্ণিল কিছু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে গণ্য না হলেও এখন কিন্তু রঙ দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করায় তারুণ্যের কমতি নেই একফোটাও। এমনকি সনাতন রঙের বাইরে খুব বেশি উজ্জ্বল রঙও ফ্যাশন সচেতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। সুতি কাপড়ের ক্ষেত্রে তরুণরা এখনও চলতি হাওয়াকেই গ্রহণ করছে। কাপড়ের ধরনের খুব বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা না হলেও তরুণরা কিন্তু নিজেদের আরাম আয়েশ আর ভালো লাগাটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ফ্যাশনের আধিপত্যে। শুধু পোশাকের ব্যবহারেই তারা খান্ত থাকছে না। পাশাপাশি নিজেকে আলাদা করে চিনিয়ে নিতে ফ্যাশনের নানা ধারাতে নিজেদের খুঁজে নিচ্ছে নানানভাবে। ড্রেসের সাথে আরও নানারকম অনুসঙ্গ ব্যবহারে অভ্যস্থ এখনকার তরুণরা। তরুণদের কাছে পাঞ্জাবির সাথে সরু চেইনই বর্তমানের ফ্যাশন হয়ে উঠছে। ফতোয়া, টি-শার্টের সঙ্গে মাথায় ব্যান্ড, কখনো কখনো কাধে স্কার্ফ আবার কখনো হাতে বাধছে ছোট রুমাল। তরুণদের ফ্যাশনে জাগরিত করার ক্ষেত্রে কাজ করছে ফ্যাশন হাউজগুলোও। যেমন জাতীয় সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায়- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে মাথায় জাতীয় পতাকা ব্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করার জনপ্রিয়তার সূচনা ঘটিয়েছে ফ্যাশন হাউজগুলো।
ফ্যাশনের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়ের কাছেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্যান্ডেল। আর স্যান্ডেলের ফ্যাশনে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চোখে পড়ে সহজেই। তরুণ তরুণী উভয়ের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট স্যান্ডেলের ব্যবহার অনেক বেশি। তরুণদের ক্ষেত্রে কালার ফুল, স্ট্রিকার আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে। মেয়েরাও এখন স্যান্ডেলের পাশাপাশি জিন্স-এ নানারকম কেডস কিংবা স্ট্রিকার পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কখনো কখনো উঁচু বুট জুতোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর স্যান্ডেলের ক্ষেত্রে দুই স্ট্র্যাপের স্লিপার এখন পছন্দের তুঙ্গে। তবে প্ল্যাটফরম হলো যথেষ্ট তুঙ্গে। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে নিজস্ব চিন্তা ভাবনায় তরুণরা খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে আপন আপন অস্তিত্ব। আবার তারাও রচনা করছে নতুনত্বের জোয়ার। তাদের চিন্তা চেতনায় বারবার পরিবর্তন যে-মন হানা দেয় তেমনি আশেপাশের চলতি হাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। অল্প পয়সায় ভিন্ন আঙ্গিকের স্টাইল নিজস্ব করে নিতে আমাদের তরুণদের জুড়ি নেই। অপর দিকে ফ্যাশন ডিজাইনাররাও ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে বসে থাকেন না। তাদের মতে তরুণদের কাছে যত সহজে ফ্যাশনের নবতর সংযোজন পৌঁছে দেয়া যায় আর কোথাও সেটা সম্ভব হয় না। তাই ডিজাইনারদের পাশাপাশি বুটিক হাউজগুলো তাদের ফ্যাশন বাণিজ্যে খুঁজে ফেরে তরুণ মুখ। সবকিছুর পাশাপাশি আপন অস্তিত্ব নিজস্ব সংস্কৃতি আর গতিময় জীবনের ধারার কথা খেয়াল রেখে তরুণ তরুণী যদি মেতে উঠে আপন ফ্যাশন ধারায়- তাহলে ক্ষতি কী?